প্রকাশিত: Tue, Dec 20, 2022 4:12 AM
আপডেট: Sun, Jun 22, 2025 12:25 PM

ফুটবল জাদুকর লিও মেসি কেন সর্বকালের সেরা?

মিরাজুল ইসলাম

দুই. ২৬টি গোল কোপা এবং বিশ্বকাপ আসর মিলিয়ে। কেবল আর্জেন্টিনা নয়, পুরো লাতিন আমেরিকান ফুটবলার হিসেবে এই গোলের রেকর্ড এখন মেসির। ব্রাজিল কিংবদন্তি রোনাল্ডোর সম্মিলিত গোল সংখ্যা ২৫টি। এমবাপ্পে বিশ্বকাপ শুরুর আগে গর্ব করে বলেছিলো, লাতিন ফুটবল ইউরোপ থেকে পিছিয়ে। ব্রাজিল কোচ তিতে চিৎকার করে পাল্টা জবাব দিয়ে বলেছিলেন, এমবাপ্পের লাতিন ফুটবল নিয়ে কোনো ধারণাই নেই। আমাদের খেলতে হয় বলিভিয়া, পেরু, প্যারাগুয়ে কিংবা ভেনেজুয়েলার রুক্ষ্ম কঠিন পরিবেশে। ওদের মতো আজারবাইজান টিমের সাথে খেলার সুযোগ আমাদের নেই। 

মেসি যথারীতি শান্ত ছিলেন ইউরোপের উস্কানিতে। কিন্তু আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক ইমি মার্তিনেজ সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিলেন। তাই শিরোপা মঞ্চে সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার হাতে নিয়ে ‘লাতিন তামাশা’র নমুনা দেখানোর মূল লক্ষ্যটাই ছিলো এমবাপ্পের দিকে। আশা করি মাঠের ভেতর এবং বাইরে পুরো ইউরোপ লাতিন পরাশক্তির পক্ষ থেকে যোগ্য জবাব পেয়ে গেছে। এই সুযোগে এমবাপ্পেকে বাড়তি শুভেচ্ছাও জানাতে চাই। তাঁর অতি মানবিক ফুটবল শক্তিমত্তার প্রশংসার দাবিদার একইসাথে তাঁর আফ্রিকান পূর্বসূরীদের প্রাপ্য। শুধু তাই নয়, ফ্রান্সের দলটিই ছিলো বহুজাতিক। সেই হিসেবে লাতিনদের সমালোচনা করার আগে আয়নায় নিজের চেহারা দরকার ছিলো এমবাপ্পের। কোয়ার্টার ফাইনালে ম্যাচের পর মেজাজ হারিয়ে মেসি হল্যান্ডের ভেগহর্স্টকে ভৎর্সনা করে বলেছিলেন, ‘কী মিরা বোবো?’ যার অর্থ, বোকা*দা কী বলতে চাস! এমবাপ্পেকে ম্যাচের পর তেমন কোনো কটু কথা শুনতে হয়নি। 

কারণ আর্জেন্টিনা গুণের কদর করতে জানে। এমবাপ্পের উচিত বাড়তি কথা না বলে খেলায় আরো মনোযোগ দেওয়া। ফিটনেস ঠিক থাকলে তার ভবিষ্যত ভালো। আমার কাছে ফরাসিদের ইংরেজি উচ্চারণ হাস্যকর। তাদের কাউকে যদি ইংরেজিতে ‘ফোকাস’ শব্দটি উচ্চারণ করতে বলেন, তবে শুনতে পাবেন সে মুখ বাঁকিয়ে বলছে, ‘ফাকাস’। মনে হবে তাকে ওটা ‘করতে’ বলছে। এমনকি হ্যামবার্গার, সকার উচ্চারণগুলোও ঠিকমতো করতে পারে না। শুনলে আপনার হাসি পাবে। যাই হোক, ফাইনালে ‘ফোকাস’ যেখানেই থাকুক, আগামী চার বছর মেসির ভূত তাঁদের তাড়িয়ে বেড়াবেÑ এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। 

তিন. [১] ২৮ ডিসেম্বর মেসিকে আবার দেখা যেতে পারে পিএসজির জার্সিতে। বিশ্বকাপজয়ী মেসি চ্যাম্পিয়নস লিগের নতুন মিশন শুরু করতে যাচ্ছেন জার্মানির স্ট্রাসবার্গের বিপক্ষে। যদিও ঠিক জানি না, ফ্রান্সে মেসির অভ্যর্থনা কেমন হবে। ড্রেসিংরুমে ফরাসি ফুটবলারদের ইগো কোন পর্যায়ে থাকবে তা দেখার বিষয়। বিশেষ করে এমবাপ্পের। অন্যদিকে নেইমার-হাকিমি-ভারিট্টি-রামোস-রুইজ-সান্তোসরা ড্রেসিং রুমে মেসিকে বরণ করে নেবেনÑ কোনো সন্দেহ নেই। পূর্ব অনুমান ছিলো, কাতার বিশ্বকাপ শেষ বিশ্বকাপ হলেও আপাতত জাতীয় দলের জার্সি মেসি আরো কিছুদিন গায়ে জড়াতে চায়। বুট জোড়ার ধার এখনো ক্ষয় হয়নি অবসরে যাবার মতো। 

মেসি ধীরে-সুস্থে সিদ্ধান্ত নেবেন কবে জাতীয় পর্যায়ে অবসরে যাবেন। এই মুহূর্তে লিও মেসির বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার গ্রাফটি আপাতত এরকম : দশটি লা লিগা, একটি ফ্রেঞ্চ লিগ, সাতটি কোপা দেল রে,সাতটি সুপারকোপা, চারটি চ্যাম্পিয়নস লীগ তিনটি উয়েফা সুপার কাপ, তিনটি ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপ, একটি অলিম্পিক ফুটবলে স্বর্ণজয়ী, একটি কোপা আমেরিকা এবং একটি বিশ্বকাপ। সেই সাথে অষ্টমবারের মতো সম্ভাব্য ‘ব্যালন ডি অর’ খেতাব জয়ের হাতছানি। [২] কাতার বিশ্বকাপে সোশ্যাল মিডিয়ার পরিধি বিস্তৃত হবার কারণে আলোচনা-সমালোচনা ছিলো উন্মুক্ত এবং অবাধ। কোনো রকম ডিজিটাল আইনের বালাই নেই। রাষ্ট্রের চোখ রাঙানো নেই। কারো সমালোচনার জবাব কেবল সমালোচনাতেই। তর্কের বিপরীতে বিতর্ক।

বিতর্কের পিঠে কিছুটা কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি। কেউ কারো ঘাড়ে কোপ দেবার ভীতি নেই। সবাই যার যার মতপ্রকাশে অকপট। চমৎকার গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় ছিলো ফুটবল ঘিরে। তারপরও কোথাও-কোথাও ক্ষরণের সংবাদ এসেছে, মগজ এবং শরীরে। সেই সাথে অন্ধ নীতির রাজনীতিও ফিরে আসতে দেখেছি। [৩] একটা বই লিখেছিলাম। মেসিকে নিয়ে। তাও বিশ্বকাপ শুরুর আগে তা প্রকাশ করবার ‘দুঃসাহস’ করেছিলাম। অলক্ষ্যে শখের খেলা কীভাবে ক্রমে জীবন দর্শনের অংশ হয়ে উঠেছিলো তা টের পেলাম পুরো পান্ডুলিপি শেষ করার পর। মেসি যদি সেদিন মেক্সিকোর সাথে হেরে যেতেন তখন বই না কেনার অজুহাত দিতো কেউ কেউ। এখন আর দিতে পারছে না। কিন্তু নিজেকে মেসিভক্ত দাবি করার পরও বইটি সংগ্রহ করবার সাহস তাদের নেই। লেখক হিসেবে আমি হতাশ, কিন্তু মেসি-ভক্ত হিসেবে মোটেও হতাশ নই। কারণ এখন জানি, তাঁরা মেসিকে আমার চেয়েও অনেক বেশি জানে এবং চেনে। তাই মেসিকে নিয়ে লেখা কোনো বই-ই তাদের জন্য যথেষ্ট নয়। লেখক ও চিকিৎসক